পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

আমাদের লজ্জা ও তার প্রতিকার

না আমরা পারিনি... আমরা পারিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গরতে। লাখো শহীদের রক্ত দিয়ে কেনা যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে আমরা ব্যাবহার করছি যাচ্ছেতাই ভাবে। নিজের স্বার্থে অন্ধ হয়ে ক্রমশ অপমানিত করছি আমাদের দেশকে, আমাদের স্বত্তাকে। এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব?

কোন এক কাছের রাষ্ট্রকে অন্ধ অনুকরন করতে যেয়ে আমাদের রুচি হয়ে গেছে বিকৃত। আমাদের দৃষ্টি আজ নিজের শেকর ভুলে, নিজের জোছনার আলো ভুলে ছুটে চলছে চোখ ধাঁধানো নিয়ন আলোর দিকে... যেভাবে একটি পোকা ক্রমশ আগুনের দিকে উরে যায়। আমাদের বাঙালীয়ানা পোষাকগুলো এখন শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ দিনের মধ্যে স্বীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আমরা আমাদের আপন সংস্কৃতি, আপন ধর্ম ভুলে দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে চলছি গন্তব্যহীন পথে... এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব?

ইংলিশ একটি আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ইংলিশ ব্যবহার করতেই হয়। (তবে বাংলাকে অবজ্ঞা করে যত্র তত্র ইংরেজি ব্যাবহার করাও চরম অপরাধ) কিন্তু হিন্দী?! আমরা কেন কথায় কথায় হিন্দী ব্যবহার করব? হিন্দী উচ্চারনে এস.এম.এস. পাঠাব? আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে পাড়া গরম করে হিন্দী গান বাজাব? বাংলা গান তো এসব অনুষ্ঠানে খুব একটা ঠাই পায়না... এই জন্যি কী ১৯৫২ সালে আমাদের ভায়েরা বাংলা ভাষার দাবিতে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ঢাকার রাজপথ রঙিন করেছিল? হায়, আমরা কত নির্বধ! এত সুন্দর আমাদের এই বাংলা ভাষাকে, বাংলা গানকে আমরা এভাবে অবহেলা করতে পারলাম! এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব?

না। আমরা দেশপ্রেমীক নই। আমরা দেশ প্রেমীক হলে দূর্নিতী করতে পারতামনা। দেশপ্রেমীকরা জানে, দূর্নিতী করলে নিজের ভাল হলেও এতে দেশের মানুষ তথা দেশের ক্ষতি হয়, দেশের সম্মানহানী হয়। আমরা যদি দেশপ্রেমীক হতাম, তবে আমাদের পাশের মানুষটি না খেয়ে থাকতনা। একজন দেশপ্রেমীক সবসময় তার পাশের মানুষের জন্য চিন্তা করে। কারন সে জানে, দেশের মানুষ না খেয়ে থাকলে দেশ উন্নত হবে না। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি হবেনা। আমরা দেশপ্রেমীক নই বলেই স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও বাংলা মায়ের বুক তার সন্তানের রক্তে রক্তাক্ত হয়... আমরা দেশপ্রেমীক নই বলেই আজো বাংলা মায়ের বুকে আমার বোনদের ধর্ষিত হতে হয়। আমরা দেশপ্রেমীক নই বলেই ইয়াসমিন - ইলোরাদের প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়। আমরা নীরব দর্শক হয়ে এসব মৃত্যুলীলা উপভোগ করি... এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব?

আমরা দেশপ্রেমীক নই। আমরা দেশপ্রেমীক হলে মুক্তিযোদ্ধারা না খেয়ে থাকতনা, বৃদ্ধ বয়সে রিকশা চালাত না... রাজাকাররা জাতীয় পতাকাবাহী গাড়িতে চড়তে পারত না... এটা আমাদের পতাকার অপমান, স্বাধীনতার অপমান, সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান, এটা আমদের বাংলাদেশের অপমান। এ লজ্জা আমরা কোথায় রাখব?

অনেকতো হল... আর কত? এখনও বাংলার মাটিতে শহীদের রক্তের ঘ্রান লেগে আছে, এখনও বিরঙ্গনার দেহের ক্ষত অভিশাপের মত জেগে আছে। এবার আমাদের চোখ মেলতে হবে; নিজেকে, নিজের স্বত্তাকে চিনতে হবে। নতুন সকালের তরুণ সূর্যের পবিত্র আলোয় শপথ নিতে হবে দেশপ্রেমের। অতীতের সব ভুল শুধরে নিতে হবে। তারপর, হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে দেশের জন্য... দেশের মানুষের জন্য। আমরাই পারব মুক্তিযোদ্ধাদের এবং লাখো শহীদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে। আমাদের পারতেই হবে; তাহলে আমাদের আর লজ্জার কোন বিষয় থাকবেনা।

*********************************************
© জাহিদ হোসেন ফাহিম
zahid.hossain005@gmail.com